মডার্নার টিকা কতটা কার্যকর? | Moderna Vaccine

 



জেলা শহরগুলোয় বর্তমানে মডার্নার টিকা দেওয়া হচ্ছে। এই টিকা সম্পর্কে কিছু তথ্য তাই জেনে রাখা ভালো। 


মডার্না। আমেরিকান এই ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা খুব বেশিদিনের নয়। (২০১০)। করোনা প্রতিরোধে প্রতিষ্ঠানটি যে ভ্যাকসিন বাজারে এনেছে সেটির নাম mRNA - 1273। তবে ভ্যাক্সিনটির বাণিজ্যিক নাম Spikevax. 



এটি মূলত আরএনএ ভ্যাক্সিন। আমরা বাজারে যেসব ভ্যাক্সিন দেখতে পাই তার থেকে আরএনএ ভ্যাক্সিন ভিন্ন। করোনা ভ্যাক্সিনের আগে কোনো আরএনএ ভ্যাক্সিন অনুমোদিত হয়নি। সাধারণভাবে ভ্যাক্সিন তৈরির জন্য রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর মৃত বা জীবিত প্রজাতি, অথবা তার অংশবিশেষ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মানবদেহে প্রয়োগের আগে সরিয়ে নেয়া হয় রোগ উৎপাদনকারী ক্ষমতা। করোনাভাইরাস ভ্যাক্সিন তৈরিতে অক্সফোর্ড, অ্যাস্ট্রাজেনেকাসহ অন্যান্য সংস্থা এই পদ্ধতিই অনুসরণ করছে। তবে মডার্নার বৈশিষ্ট্য হলো তাদের ভ্যাক্সিন কিছুটা ভিন্নভাবে তৈরি। 


করোনাভাইরাস আমাদের শরীরকে আক্রমণ করে। এক্ষেত্রে মূলত দায়ী তাদের বহিরাবরণ থেকে সূচের মতো খাড়া হয়ে থাকা অগণিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ, যেগুলোকে বলা হয় স্পাইক। প্রোটিন বা আমিষজাতীয় পদার্থে তৈরি এসব স্পাইকের সাহায্যেই করোনাভাইরাস আঁকড়ে ধরে আমাদের মানবকোষ, ঢুকিয়ে দেয় রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু।


মডার্নার ভ্যাক্সিন প্রধানত ভাইরাসের আরএনএ দিয়ে বানানো, যাদের মূল কাজ হচ্ছে স্পাইকের মতো প্রোটিন তৈরি করা। কাজেই শরীরে প্রবেশ করে এই ভ্যাক্সিন যখন স্পাইকের অনুরূপ প্রোটিন তৈরি করবে, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তখন কার্যকর হয়ে উঠবে। তারা এই প্রোটিনের মোকাবেলা করবার মতো অ্যান্টিবডি প্রস্তুত করতে আরম্ভ করলে পরবর্তীতে যখন সত্যিকারের করোনাভাইরাস আমাদের দেহে প্রবেশ করবে তখন দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হবে। যেহেতু শুধুমাত্র আরএনএ-র রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা নেই, তাই ভ্যাক্সিন থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে।



মডার্না তাদের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চালানোর জন্য বেছে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ১০০টি প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে ৩০ সহস্রাধিক মানুষকে নির্বাচন করা হয় এজন্য। স্বেচ্ছাসেবীদের অর্ধেককে ভ্যাক্সিন আর অর্ধেককে প্লাসেবু দেয়া হয়। দুটি ডোজ দেয়ার পর দেখা যায়- যারা টিকা পেয়েছেন তাদের মধ্যে ১১ জন কোভিডে আক্রান্ত হন, তবে কেউই মারাত্মক রকম অসুখের শিকার হননি। কিন্তু যারা টিকা পাননি তাদের ১৮৫ জনের কোভিড সনাক্ত হয়, যাদের ৩০ জন অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। একজন স্বেচ্ছাসেবী মারাও যান। সমস্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মডার্নার টিকা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৯৪.১ শতাংশ কার্যকর। তবে এই কার্যকারিতা গড়ে ওঠে টিকার শেষ ডোজ প্রদানের অন্তত ১৪ দিন পর।   


ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এশিয়ার মাত্র ৫ শতাংশ মানুষকে নেওয়া হয়েছিল। 


গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) নতুন এক বিবৃতিতে 

মডার্না বলেছে, তাদের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পর্যন্ত তা ৯৩% কার্যকর থাকে। 



মডার্নার সুবিধা হলো তাদের টিকা সাধারণ ফ্রিজে -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা -৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটে সংরক্ষণ করা যাবে ছয় মাস অবধি। একবার বের করে ফেললে তার পর আরো এক মাস ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখা সম্ভব। 


অন্যান্য ভ্যাকসিনের মতো মডার্নার টিকাতেও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সিডিসি'র দেওয়া তথ্য বলছে, এই ভ্যাক্সিন নেওয়ার পর অনেকের ভ্যাক্সিন গ্রহণের স্থানে হালকা ব্যথা, ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। এছাড়া মাথা ধরা, জ্বর, ক্লান্তি, বমি বমি ভাবের মতো শারীরিক সমস্যা হতে পারে। সিডিসি এই সমস্যাগুলোকে গুরুতর বলতে রাজি নয়। তাদের দাবি, ক'দিনের মধ্যেই টিকা গ্রহণকারি এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।