চেক ডিজঅনার মামলা সম্পর্কিত বিধান | Cheque dishonour | TmA
লেখা: সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম
চেক ডিজঅনার মামলার পক্ষ তিনটি:
- চেক দাতা।
- চেক গ্রহীতা।
-ব্যাংক।
The Negotiable Instruments Act, 1881 এর ধারা ১৩৮ এ চেক ডিজঅনার এর মামলা সম্পর্কিত বিধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এ ধারামতে একটি চেক ডিজঅনার / বাউন্স / প্রত্যাখাত হতে পারে যদি-
১। চেকদাতার ব্যাংক একাউন্টে চেকে উল্লেখিত অংকের অর্থের তুলনায় অপর্যাপ্ত তহবিল থাকে। অথবা,
২। যে পরিমাণ অর্থের জন্য ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে তার অধিক পরিমাণ অর্থ চেক এ লিখা হয়।
উপরোক্ত কারণে যদি চেক ডিজঅনার হয় তবে এ ধারামতে চেক প্রদানকারী একজন শাস্তিযোগ্য অপরাধী হিসাবে গন্য হবে।
এ ধারামতে আদালত এক্ষেত্রে চেক প্রদানকারীকে নিম্নোক্ত শাস্তি দিতে পারেন-
(ক) সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদন্ড।
(খ) চেকে উল্লেখিত পরিমাণ অর্থের তিন গুন পর্যন্ত অর্থদন্ড। অথবা
(গ) ক ও খ তে বর্ণিত উভয় দন্ড।
আদালত কর্তৃক প্রদত্ত অর্থদন্ডের টাকা আদালত চেক গ্রহীতাকে প্রদান করবেন।
N.B: (এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, মামলার বাদী অর্থাৎ চেক গ্রহীতা শুধুমাত্র চেকে উল্লেখিত অংকের সমপরিমাণ টাকাই পাবেন বাকী টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হবে)
কখন মামলা করা যাবে : (চেক গ্রহীতার করণীয়)
এ ধারামতে-
১. চেকের তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে চেকটি নগদায়নের জন্য ব্যাংকে উপস্থাপন করতে হবে।
২. চেকটি যেদিন বাউন্স / প্রত্যাখাত হবে সেদিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে চেক প্রদানকারীকে চেক এর অর্থের পরিমাণ দাবী করে লিখিত নোটিশ দিতে হবে।
৩. চেক প্রদানকারী ব্যক্তি যেদিন লিখিত নোটিশ পাবে, সেদিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে যদি চেক এ উল্লেখিত অংকের অর্থ প্রদানে ব্যর্থ হয় তবে তার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হবে।
নোটিশ জারি পদ্ধতি
এই আইনের ১৩৮ ধারা মতে নিম্নোক্ত উপায়ে নোটিশ জারী করা যায়ঃ
(ক) চেক প্রদানকারীর নিকট হাতে-হাতে নোটিশ হস্তান্তরের মাধ্যমে।
(খ) নোটিশ প্রাপকের সর্বশেষ বসবাস/ ব্যবসায়িক ঠিকানায় রেজিস্টার্ড ডাকযোগে নোটিশ প্রেরণের মাধ্যমে।
(গ) ১ টি বহুল প্রচলিত জাতীয় বাংলা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রদানের মাধ্যমে।
কখন নোটিশ জারি হয়ে গেছে বলে ধরে নেয়া হবে?
The General Clauses Act, 1897 এর ২৭ ধারামতে যখন কোনো নোটিশ-
(১) সঠিক ঠিকানায় পোস্ট করা হয়;
(২) প্রাপ্তি স্বীকারসহ রেজিস্টার্ড ডাকযোগে পাঠানো হয়;
তখন অন্যান্য যেকোনো নোটিশ/ চিঠি ইত্যাদি প্রেরণের জন্য সাধারণত যে সময় লাগে, সে সময় অতিবাহিত হলেই নোটিশ জারী হয়েছে বলে আদালত ধরে নিবেন।
উচ্চ আদালতের রায়
#Monjur Alam Vs. The State and Others 09 BLC (HCD) 88 এই মামলায় বলা হয়-
The Negotiable Instrument Act, 1881 এর 138 ধারার অধীনে যদি কোনো অপরাধ সংঘটিত হয় তবে ফৌজদারি আদালত (Criminal Court) এই অপরাধ বিচার করার জন্য উপযুক্ত আদালত এবং দেওয়ানী আদালতে (Civil Court) এ সংক্রান্ত কোনো মামলা বিচারাধীন হলে তা ফৌজদারি মামলার বিচারে কোনো বাধা হবে ন। কেননা দেওয়ানী আদালত এর সাথে ফৌজদারি আদালতের সিদ্ধান্ত কখনোই সাংঘর্ষিক হবার সম্ভাবনা নেই।
#Estern Bank Ltd. Vs. Md. Shiraj Ud Doula 72 DLR (AD) 79 এ মামলার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী-
চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত মামলার পাশাপাশি একই বিষয় নিয়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা চলতে কোনো বাধা নেই।
চেক এর মামলা সম্পর্কে কিছু বিষয় (চেক প্রদানের আগে জেনে নিতে হবে)
১। আপনার দেয়া চেকটি সংগত কারণ ছাড়া যেকোনো কারণে প্রত্যাখাত হলেই আপনার নামে মামলা দেয়া যেতে পারে।
২। চেকের মামলায় আসামী আদালতে হাজির না হলে সহজেই গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু হয়।
৩। মামলার জন্য প্রায় প্রতি ধার্য তারিখেই আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে।
৪। মামলাটি খুব দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, ঘোরানো-পেচানোর সুযোগ খুব কম এবং নাই বললেই চলে।
৫। একবার রায় হয়ে গেলে জরিমানার অন্তত ৫০% অর্থ জমা রেখে আপীল করতে হয়।
লেখক:
শিক্ষানবীশ আইনজীবী
ঢাকা জজ কোর্ট, ঢাকা, বাংলাদেশ।
ট্যাগ: Cheque dishonour, চেক ডিজঅনার মামলা, চেক ডিজঅনার মামলা করার নিয়ম, চেক ডিজঅনার মামলার শাস্তি, চেক মামলার জামিন, চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা, চেক বাউন্স হলে কি হয়,