জামিন এর বিধান | Provision of bail | TmA
লেখা: সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম
ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে "Presumption of Innocence" মতবাদ আইনগতভাবে প্রচলিত। এর অর্থ হচ্ছে এই যে, কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তির অভিযুক্ততা যতক্ষন না সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় ততক্ষন পর্যন্ত আদালত তাকে নির্দোষ হিসাবে ধরে নিবেন। অভিযুক্তের এই সুবিধাটিকে বলা হয় Benefit of doubt।
তাহলে কেন তাকে এরেস্ট বা গ্রেফতার করা হয় এবং পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়?
- মূলত নিম্নোক্ত কারণে তাকে অভিযুক্ততা প্রমাণের আগে অভিযুক্ত/ আসামীকে পুলিশি হেফাজতে/ কারাগারে রাখা হয়:
১. আদালতে তার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে।
২. অভিযোগের অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে।
৩. যাতে করে অভিযুক্ত ব্যক্তি সাক্ষ্য ও প্রমাণ নষ্ট করতে না পারে এই জন্যে।
উপরোক্ত বিষয়সমূহ নিশ্চিত করার প্রেক্ষিতে আদালত একজন অভিযুক্ত/ আসামীকে রায় এর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত যে কোনো স্টেজে জামিনে মুক্ত করতে পারেন।
'জামিন' শব্দের অর্থ হচ্ছে 'মুক্ত করা'। কোনো অভিযুক্ত এবং আটককৃত ব্যক্তিকে বিচার চলাকালীন যেকোনো মুহূর্তে আদালতে মুচলেকা প্রদানের মাধ্যমে যেকোনো সময়ে আদালতে হাজির হবার শর্তে তার জিম্মাদারের নিকট প্রদান করাকে জামিন বলে। এটা সাময়িক মুক্তি।
ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৪৯৬ থেকে ধারা ৫০২ তেই মূলত জামীন সংক্রান্ত বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর অধীনে কোনো অপরাধ জামিনযোগ্য নাকি জামিন অযোগ্য সেটা জানতে হলে আমাদেরকে দেখতে হবে ফৌজদারি কার্যবিধির ২য় তফসিল এর ৫ম কলাম। সেখানে কোন অপরাধ জামিনযোগ্য এবং কোনটি জামিন অযোগ্য সেটি বলা হয়েছে।
জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন পাওয়া একজন অভিযুক্তের/ আসামীর অধিকার। তবে জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রেও আসামী/ অভিযুক্তকে জামিনে মুক্তি দেয়া যেতে পারে।
ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৪৯৭ -তে আলোচনা করা হয়েছে কখন একজন জামিন অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত/ আসামী জামিন পেতে পারেন।
এ ধারায় বলা হয়েছে নিম্নোক্ত ব্যক্তিরা জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রেও জামিন পেতে পারেন-
(ক) যিনি মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড এমন শাস্তিযোগ্য অপরাধী নন।
(খ) যার বয়স ১৬ বছর অপেক্ষা কম।
(গ) মহিলা।
(ঘ) অসুস্থ ব্যক্তি।
তবে খ, গ এবং ঘ -তে বর্ণিত ব্যক্তিরা মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন শাস্তিযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রেও জামিন পেতে পারেন।
আগাম জামিন কী? এবং কখন আগাম জামিন পাওয়া যেতে পারে?
ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৪৯৮ তে আগাম জামিন সম্পর্কিত বিধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগ/ দায়রা আদালত "যেকোনো ক্ষেত্রে" আসামী/ অভিযুক্তকে জামিন দিতে পারেন। পাশাপাশি জামিন হ্রাস করার অধিকার ও এই ধারা আদালতকে দিয়েছে।
State vs. Professor Dr. Morshed Hasan Khan, 71 DLR (AD) 364 এই মামলায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগীয় বিজ্ঞ বিচারপতি স্যার হাসান ফয়েজ সিদ্দিক, আগাম জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে ১৬ টি অনুসরণীয় নীতি বর্ণনা করেছেন।
যেখানে বলা হয়েছে, নিম্নোক্ত কারণ বিবেচনায় আগাম জামিন দেয়া যেতে পারে যদি-
১. অভিযোগে অস্পষ্টতা থাকে।
২. অভিযোগ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট প্রমাণ যদি না থাকে।
৩. সাক্ষী এবং প্রমাণ নষ্টের কোনো ঝুকি না থাকলে।
৪. যদি অভিযোগটি শুধুমাত্র অভিযুক্তকে হয়রানির জন্যই করা হয়।
৫. অভিযোগটি ভিক্টিমের জন্য ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য না হয়ে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে।
৬. জামিন দেয়ার জন্য অন্য কোনো উপযুক্ত কারণ যদি থেকে থাকে।
এছাড়াও ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি নিম্ন আদালতের রায়ে নিজেকে সংক্ষুব্ধ মনে করলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপীলের শর্তে জামিন নিতে পারেন।
পুলিশ অফিসার কর্তৃক জামিন
ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ১৬৯ এর ক্ষমতাবলে কোনো অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের কোনো পর্যায়ে কোনো পুলিশ অফিসারের নিকট যদি এরূপ প্রতীয়মান হয় যে, অভিযোগের বিরুদ্ধে যথেষ্ট কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই তবে একজন পুলিশ অফিসার অভিযুক্তকে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট না পাঠিয়ে অভিযুক্তকে যেকোনো দিন/ সময়ে হাজির হবার শর্তে এবং বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট পাঠাবার শর্তে জামিনে মুক্ত করতে পারেন।
লেখক:
শিক্ষানবীশ আইনজীবী
ঢাকা জজ কোর্ট, ঢাকা, বাংলাদেশ।
Tag: যৌতুক মামলার জামিন, আগাম জামিন কিভাবে নিতে হয়, জামিনের খরচ, জামিনের নিয়ম, জামিন যোগ্য ধারা, Provision of bail, জামিন,