অলৌকিকভাবে মেয়ে থেকে ছেলে : বিজ্ঞান কী বলছে? | Gender Change | TmA

 


অলৌকিকভাবে মেয়ে থেকে ছেলে : বিজ্ঞান কী বলছে? | Gender Change | TmA 


সম্প্রতি দেশে এক কিশোরীর অলৌকিকভাবে লিঙ্গ পরিবর্তনের ঘটনা বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যে কিশোরীকে নিয়ে এত তোলপাড়, তার নাম লাভলী আক্তার (১৫)। টাঙ্গাইলের গোপালপুরের মির্জাপুর ইউনিয়নের নঠুরচর পশ্চিম পাড়া গ্রামের লাভলীর আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা যাচ্ছে, লাভলী মেয়ে থেকে ছেলেতে পরিণত হয়েছেন। অনেকটা হঠাৎ করেই এ খবর প্রকাশ্যে এলেও লাভলীর ভেতর এই পরিবর্তন আসে বেশ কয়েক মাস আগেই। 


  মেয়ে থেকে ছেলেতে পরিণত হওয়ায় তার বাবা মেয়ের নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন আব্দুল্লাহ জিসান।



মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হালিমুজ্জামান তালুকদার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, প্রায় কয়েক মাস আগে লাভলী আক্তারের মধ্যে ছেলেদের মতো ভাব আসে। একবার তার বিয়েও ঠিক হয়েছিলো। লিঙ্গ পরিবর্তনের কারণে সে বিয়েতে মত দেয়নি। কিন্তু ওই সময়ে বিষয়টি কাউকে জানায়নি তার পরিবার। 



লাভলীর বাবা লাভলু মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি তার স্ত্রীর কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারেন। এখন তার শারীরিক গঠন পুরুষের মতো। এছাড়া চেহারাতেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। 



তার মা পারভিন আক্তার বলছেন, ছয় মাস আগে লাভনী আক্তারের (আব্দুল্লাহ জিসান) বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ে করতে অসম্মতি প্রকাশ করে সে সময় লাভলী আক্তার তার মাকে লিঙ্গ পরিবর্তনের বিষয়টি জানান। কিন্তু তার মা ঘটনাটি বিশ্বাস করেননি। পরে তিনি সবকিছু জেনে শুনে বিশ্বাস করেন। 



গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলিম আল রাজি বলেন, ‘ আমাদের দেশে মাঝে-মধ্যেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এটা সাধারণত হরমোন জনিত সমস্যার কারনে হয়ে থাকে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হবে। সেখানে টিউমার থাকতে পারে।’ 


সাধারণত মেয়ে থেকে ছেলে কিংবা তার উল্টোটা অপারেশনের মাধ্যমেই করা হয়ে থাকে। সারা বিশ্বেই এই ধরনের চিকিৎসা বেশ সুপরিচিত। কিন্তু অলৌকিকভাবে এই ধরনের ঘটনা বিরল। এই ব্যাপারে বিজ্ঞান কী বলছে তা জানা যাক এবার। 


মানবদেহে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম আছে। এটা সকলের ক্ষেত্রেই সমান। যারা পুরুষ, তাদের থাকে XY ক্রোমোজোম, আবার যারা নারী, তাদের থাকে XX ক্রোমোজোম। এখন, আমাদের রোগীরা সবাই কিন্তু জন্মগত পুরুষ! 



 এদের গোনাডও রয়েছে। কিন্তু ক্রোমোজোম এর মিউটেশন এর ফলে এরা জন্ম নিয়েছে নারী ফিনোটাইপ হিসেবে ( ফিনোটাইপ মানে হল, বাহ্যিক ভাবে দেখতে কেমন সেটা)। অনেক ছোটবেলায়, যখন সবেমাত্র তারা জন্ম নিয়েছে, এই জিনের খেলায় তাদের দেহে একটা হরমোন এর অভাব ছিল, যার পোশাকি নাম ডাইহাইড্রো টেস্টোস্টেরন (DHT)। 




এই হরমোনের এতই অভাব ছিল যে, তাদের ভেতর পুরুষ বৈশিষ্টের প্রকাশ ঘটেইনি, উল্টো স্ত্রী হরমোন এই সুযোগ নিয়ে, বাচ্চাদের ভেতর স্ত্রী বৈশিষ্ট্য এর প্রকাশ ঘটিয়েছে। ফলে, যখনই আমরা ফিনোটাইপ অ্যানালাইসিস করতে গিয়েছি, দেখেছি এরা সব মেয়ে শিশু। এদের মেয়েদের মত যৌনাঙ্গ আছে, অধিকাংশের ঠিকমত সেটা বোঝা যায় না, সেটাকে বলে অ্যাম্বিগস জেনিটালিয়া (ambiguous genitalia), এরা বড়ও হয় মেয়ে হিসেবে। 



বয়ঃসন্ধিকালে এই সব রোগীর দেহে হুট করে টেস্টোস্টেরন এর ক্ষরণ বেড়ে যায়। যার প্রভাবে, স্ত্রী হরমোন দমিত হয়, রোগীদের দেহে সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটতে থাকে। মুখে এদের দাড়ি গজায়, বুক সমান হতে থাকে, মাংসপেশির ঘনত্ব বেড়ে যায়, গলার স্বর ভারী হয়ে যায়। একই সময়ে, টেস্টোস্টেরন এর প্রভাবে এদের যৌনাঙ্গ এবং অন্ডকোষ (penis and scrotum) বৃদ্ধি পেতে থাকে, কিন্তু এদের বৃদ্ধি হয় ত্রুটিযুক্ত ভাবে। এর ফলে, ফিনোটাইপ মেয়ে পরিণত হয় ফিনোটাইপ পুরুষে, যদিও এদের জিনোটাইপ কিন্তু XY! দুঃখের বিষয়, এদের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা কম, অনেক রোগীর চিকিৎসক সহায়তা ছাড়া সন্তানও জন্ম নেয় না। এই রোগের নাম ফাইভ আলফা রিডাকটেজ ডেফিসিয়েন্সি (5-alpha reductase deficiency)। 



এর রোগের প্রধান এবং প্রধানতম কারণ হল, SDR5A2 জিনে একটি মিউটেশন। এই জিন সুস্থ অবস্থায়, একটি এনজাইম তৈরি করে, যার নাম ফাইভ আলফা রিডাকটেজ-২ (5-alpha reductase 2)। এই এনজাইমের কাজই হল, অ্যান্ডোজেন তৈরি এবং টেস্টোস্টেরন এর সাথে বিক্রিয়া করে ডাইহাইড্রো টেস্টোস্টেরন (DHT) তৈরি করা। কিন্তু যেহেতু মিউটেশন এই কাজে বাধা দেয়, সুতরাং পর্যাপ্ত ডাইহাইড্রো টেস্টোস্টেরন (DHT) তৈরি হয় না, জিনোটাইপ পুরুষ কিন্তু ফিনোটাইপ মহিলা জন্ম নেয়। 



খুবই বিরল এমন ঘটনা, সাড়ে চার হাজার শিশুর মধ্যে একজনে এই ঘটনা দেখা যায়। জেনেটিক্স এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নত হওয়া সত্ত্বেও ২০ থেকে ৪০ শতাংশ বাচ্চার ঠিকমত ডায়াগনোসিস হয় না, ফলে এই জটিলতা দেখা যায়। 


পৃথিবীতে পাপুয়া নিউগিনি, দক্ষিণ লেবানন এবং ডোমিকান রিপাবলিকে এই রোগের প্রকোপ চোখে পড়ার মতো। ডোমিকান রিপাবলিকেই বেশি, কারণ হিসেবে বংশের ভেতর বিয়ে ( মামাতো , চাচাতো ভাই বোনের ভেতর বিয়ে) কে দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। 


মোটামুটি একই রকম আরেকটা রোগ আছে, যার নাম টেস্টিকুলার ফেমিনাইজেশন। এরা জিনোটাইপ XY, কিন্তু X ক্রোমোজমে ত্রুটির কারণে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এরা পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হয়।



tags: মেয়ে থেকে ছেলে হওয়ার ঘটনা,মেয়ে থেকে ছেলেতে রূপান্তর,tma,tmabd,অলৌকিকভাবে মেয়ে থেকে ছেলে হলো লাবনী,কিভাবে লিঙ্গ পরিবর্তন করা হয়,gender change,