লেখা : TmA Islamic Desk
আপনি নিশ্চয়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন, তাই না? যদি মেয়ে হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই নিজের ছবিও সেখানে প্রকাশ করেন। মানুষ হিসেবে আমাদের সকলেরই প্রশংসা পাওয়ার একটা সহজাত প্রবণতা রয়েছে সেই প্রবণতা থেকে আপনার ছবিতে যখন অনেক লাইক পড়ে, আসে নানান কমেন্ট, স্বাভাবিকভাবেই সেটি আপনাকে আনন্দ দেয়। কিন্তু সেই সাময়িক আনন্দ যদি হয় পরকালের দুঃখের কারণ? ছেলে হিসেবে আপনি যখন একজন গায়রে মাহরাম নারীকে দেখছেন, করছেন নানান কমেন্ট, তখন আপনিও যে গুনাহর ভাগিদার হচ্ছেন, তা কি ভেবেছেন কখনো?
আজকের এই লেখায় আমরা এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো, জানবো মাহরাম ও গায়রে মাহরাম এর আদ্যপান্ত। আপনার চাইলে TmA এর ইউটিউব চ্যানেল থেকে এ সম্পর্কিত ভিডিওটি দেখতে পারেন।
সহীহ বুখারীর একটি হাদিস দিয়ে এই লেখা শুরু করা যাক।
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "কোন মহিলাই যেন মাহরাম পুরুষকে সঙ্গে না নিয়ে তিন দিনের সফর না করে।"
(সহীহ বুখারী, ১০২৮)
মাহরাম কি??
‘মাহরাম’ শব্দের শাব্দিক অর্থ হিসেবে যা হারাম তা-ই বুঝানো হয়। এটা সাধারণত হালাল এর বিপরীত।
মাহরাম বলতে পবিত্র কোরআন এবং সুন্নাহের আলোকে নির্ধারিত কিছু ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যাদের সাথে আপনি কোনো অবস্থাতেই বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন না। তবে তাদের সাথে আপনি দেখা দিতে পারবেন এবং তাদেরকে সাথে নিয়ে কোথাও সফর করতে পারবেন। এটি নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য।
মাহরাম ব্যতীত অন্য সকল পুরুষদের সাথে দেখা করা অথবা তাদেরকে সাথে নিয়ে সফর করা মুসলিম নারীদের জন্য সম্পূর্ণ হারাম।
গায়রে মাহরাম কি?
যে সকল পুরুষের সামনে যাওয়া নারীর জন্য শরীয়তে জায়েজ নয় বলে স্বীকৃত এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন বৈধ করা হয়েছে তাদের কে গায়রে মাহরাম বলা হয়।
এর মানে, গায়রে মাহরামের সামনে একান্ত অপারগ হয়ে যদি যাওয়াই লাগে তবে নারীকে পূর্ণ পর্দা করে সামনে যেতে হবে। যারা কাজের খাতিরে বাহিরে যান, তাদের অবশ্যই পর্দা মেনে পোশাক পরিধান করতে হবে।
মাহরাম ছাড়া বাকি সকলে গায়রে মাহরাম।
কী বলা হয়েছে কোরআনে?
‘আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।’
(সূরা নূর- ৩১)
সাধারণত তিন ধরনের সম্পর্কের কারণে মাহরাম সাব্যস্ত হয়।
১। রক্তের সম্পর্কের কারণে।
২। দুধ পানের কারনে।
৩। বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে।
কারা কারা মাহরাম?
পবিত্র কোরআনে যা বলা হয়েছে,
"তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে, দুধমা, দুধবোন, শাশুড়ী ও তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সংগত হয়েছ তার আগের স্বামীর ঔরসে তার গর্ভজাত মেয়ে, যারা তোমাদের অভিভাবকত্ব আছে, তবে যদি তাদের সাথে সঙ্গত না হয়ে থাক, তাতে তোমাদের কোন অপরাধ নেই। আর তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ তোমাদের ঔরসজাত ছেলের স্ত্রী ও দুই বোনকে একত্র করা, আগে যা হয়েছে, হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। "
(সূরা নিসা-২৩)
এরা ছাড়া বাকী সবাই “গায়রে মাহরাম” (মাহরাম নহে)। এর অর্থ হল, ‘গায়রে মাহরামে’র সাথে বৈবাহিক বন্ধন হতে পারে। তাই, বৈবাহিক বন্ধনের আগে তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হারাম, তবে, বিবাহ করার জন্য কনে দেখা জায়েয আছে।
পুরুষের জন্য মাহরাম কারা?
১। মা/ সৎ মা
২। খালা
৩। ফুফু
৪। শাশুড়ী
৫। মেয়ে / ভাইয়ের মেয়ে / বোনের মেয়ে
৬। আপন বোন / সৎ বোন
৭। দাদী / নানী / বয়োবৃদ্ধা
৮। ছেলের স্ত্রী
৯। নাতনী/ছোট বাচ্চা যাদের প্রতি কোনো আকর্ষণ তৈরি হয় না
১০। স্ত্রী
উল্লেখিত ব্যাক্তিদের সাথে পুরুষের বিবাহ হারাম (স্ত্রী ব্যতীত, কারণ স্ত্রী গায়রে মাহরাম থেকে মাহরাম হয়েছে বিবাহের মাধ্যমে।) । তাদের সাথে আপনি দেখা দিতে পারবেন এবং তাদেরকে সাথে নিয়ে কোথাও সফর করতে পারবেন।
![]() |
নারী ও পুরুষের জন্য মাহরাম যারা। © TmA |
নারীর জন্য মাহরাম কারা?
১। নানা / দাদা / বয়োবৃদ্ধ
২। বাবা
৩। স্বামী
৪। ছেলে/সৎ ছেলে /ভাগিনা/ভাতিজা
৫। শ্বশুড়
৬। ভাই / সৎ ভাই
৭। মামা
৮। চাচা
৯। নাতি / ছোট বাচ্চা যাদের প্রতি কোনো আকর্ষণ তৈরি হয় না
১০। মেয়ের জামাই
উল্লেখিত ব্যাক্তিদের সাথে নারীর বিবাহ হারাম (স্বামী ব্যতীত, কারণ স্বামী গায়রে মাহরাম থেকে মাহরাম হয়েছে বিবাহের মাধ্যমে।) । তাদের সাথে আপনি দেখা দিতে পারবেন এবং তাদেরকে সাথে নিয়ে কোথাও সফর করতে পারবেন।
এ সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে করতে পারেন অথবা ব্যক্তিগতভাবে মেসেজ করতে পারেন TmA Facebook Page এ।
লেখাটি শেয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন। বাঁচান গুনাহ থেকে।