আত্মহত্যা : হাদিসের বাণীতে ভয়াবহতার বয়ান

 


Written by : Tanvir Mahatab Abir


আমরা প্রায়ই পারিবারিক টানাপোড়েন, প্রেমে ব্যর্থতার হতাশা কিংবা আর্থিক অসচ্ছলতায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে মানুষের আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার গল্প শুনি।


আত্মহত্যা সম্পর্কে সহীহ হাদিস বুখারী শরীফে দুইটি বর্ণনা এসেছে।


প্রথমটিতে কি বলা হয়েছে দেখুন,



মুসাদ্দাদ (রহঃ) … সাবিত ইবনু যাহহাক (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যে ব্যাক্তি ইসলাম ব্যতিত অন্য কোন ধর্মের (অনুসারী হওয়ার) ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা হলফ করে সে যেমন বলল, তেমনই হবে আর যে ব্যাক্তি কোন ধারালো লোহা দিয়ে আত্মহত্যা করে তাকে তা দিয়েই জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) বলেন, জারীর ইবনু হাযিম (রহঃ) আমাদের হাদীস শুনিয়েছেন হাসান (রহঃ) থেকে, তিনি বলেন, জুনদাব (রাঃ) এই মসজিদে আমাদের হাদীস শুনিয়েছেন, আর তা আমরা ভুলে যাই নি এবং আমরা এ আশংকাও করিনি যে, জুনদান (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামে মিথ্যা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এক ব্যাক্তির (দেহে) যখম ছিল, সে আত্মহত্যা করল। তখন আল্লাহ পাক বললেন, আমার বান্দা তার প্রাণ নিয়ে আমার সাথে তাড়াহুড়া করল। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম। (বুখারী শরীফ, ২য় খন্ডঃ ১২৮০)





দ্বিতীয়টিতে আরও স্পষ্ট হবে ব্যাপারটি,


আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) নিজেকে ফাঁস লাগাতে থাকবে আর যে ব্যাক্তি বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নাম (অনুরূপভাবে) বর্শা বিঁধতে থাকবে। (বুখারী শরীফ, ২য় খন্ডঃ ১২৮১)


আত্মহত্যাটাই কি হতাশা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ? জাহান্নামটাকে বরণ করে নেয়ার আগে মানুষগুলো হয়ত নিজেকে এই স্বার্থপর পৃথিবী থেকে মুক্তি দিতে পারে, কিন্তু নিজের পরিবারটার কথা কি তারা একটুও ভাবে না?


ছোট্ট একটা জীবন, অথচ আমাদের পাওয়ার আকাঙ্খা বিশাল। সেই আকাঙ্খা যখন আর পূরণ হয় না, তখন স্বাভাবিকভাবেই হতাশা ঘিরে ধরে। নিজেকে বড্ড একা লাগা শুরু হয় তখন থেকেই, এই একাকীত্ব আর না পাওয়ার কষ্টটা একটা মানুষকে শেষ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। 


আরও পড়ুন: রাসূলের মেরাজে: কী ঘটেছিল সে রাতে?


জীবনে না পাওয়ার হাজারটা গল্প থাকবে। ব্যর্থতা আর হতাশার দিনে ‘আপন’ বলে পরিচয় দেয়া অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নেবে। পাশের বাসার আন্টি কিংবা উপরতলার আংকেল খোঁচা দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবে না। এসব নিয়ে যদি আপনি বিন্দুমাত্রও চিন্তা করেন সেটাই বরং বোকামি। কে কি বললো সেটা নিয়ে ভাবলে সাফল্যের পথটা অধরাই থেকে যাবে।


মৃত্যু কখনোই ঠিক সমাধান দেয় না। জীবনের পরীক্ষাটায় কমবেশি সবাই বোধহয় ব্যর্থতার মুখ দেখেই। স্বপ্নের কিংবা মানসিক মৃত্যুটা অনেকের নীরবেই ঘটে যায়। কিন্তু জীবনের ছোট ছোট পরীক্ষাগুলোয় ব্যর্থতার গ্লানির দায় নিয়ে জীবনটাকেই শেষ করে দেয়া কিংবা টেনশনটা খুব বেশি করার পরিণতি মৃত্যু হবে- এটা কখনোই কাম্য নয়।




আপনার আশেপাশের মানুষগুলোর দিকে একটু তাকান। শুধু সাফল্যের খবরে তাদের অভিনন্দন না জানিয়ে ব্যর্থতার দিনগুলোয় একটু সহানুভূতির হাত বাড়ান। “চিন্তা করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। ” বিশ্বাস করুন, হতাশা ঘিরে থাকা মানুষগুলো শুধু এটুক শুনতে পেলেই খারাপ সময়টা কাটিয়ে উঠার জন্য মনে জোর পায়। কিন্তু স্বার্থ্যের স্রোতে গা ভাসানো এই সমাজটায় এটুক বলার মানুষই খুঁজে পাওয়া দায় আজকাল।


সব কষ্ট, ব্যর্থতা কিংবা আকাঙ্খিত স্বপ্নের মৃত্যু সহ্য করার মানসিকতায় বাঁচতে শিখতে হয়। ব্যর্থতা থেকেই নিতে হয় শিক্ষা। দেখতে হয় নতুন স্বপ্ন, থাকতে হয় সেটা পূরণ করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।

স্বপ্ন বেঁচে থাক। বিশ্বাস অটুট থাকুক সৃষ্টিকতার উপর। প্রত্যাশাটা এতটুকুই।

লেখাটি শেয়ার করে অন্যদেরও জানার সুযোগ করে দিন। 


আরও পড়ুন: হ্যাশট্যাগ ফেসবুকে কার্যকর নয়?