- TmA ডেস্ক
বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর অক্টোবর মাসকে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে পালন করা হয়। এই ক্যান্সারকে নারীদের নীরব ঘাতক বলা হয়ে থাকে। কিন্তু পুরুষদের স্তন ক্যান্সারও এখন মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে। পৃথিবীর সব ঘাতক ব্যাধির মধ্যে স্তন ক্যান্সার বেশি মারাত্মক। ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর কারণ হিসেবে সারাবিশ্বে স্তন ক্যান্সারের স্থান দ্বিতীয়, শীর্ষে রয়েছে ফুসফুসের ক্যান্সার।
পরিসংখ্যান কী বলছে?
২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ২২ লাখ ৬১ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। গেল বছর বিশ্বে ৬ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ মারা যায় এই ঘাতব ব্যাধিতে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ১৫ লক্ষাধিক নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং প্রতি লাখে ১৫ জন নারী মারা যান।
সারা বিশ্বে নারীমৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো স্তন ক্যান্সার। প্রতি ৮ জন মহিলার মধ্যে একজনের স্তন ক্যান্সার হতে পারে এবং আক্রান্ত প্রতি ৩৬ জন নারীর মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা একজনের।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০৪০ সাল নাগাদ স্তন ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বাড়বে। বাড়বে মৃত্যুও। সংখ্যাটা পৌঁছে যেতে পারে বছরপ্রতি ১০ লাখে।
বাংলাদেশে কী অবস্থা?
আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘আইএআরসি’র ২০২০ সালের হিসাব মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৩ হাজার নারী নতুন করে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এরমধ্যে মারা যায় সাড়ে ছয় হাজারের বেশি। নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন এই ক্যান্সারে। আক্রান্তের অর্ধেকই মৃত্যুকেই শেষ পরিণতি মানতে হয়।
আমাদের দেশে ক্যান্সারে যত নারীর মৃত্যু হয়, তার অন্যতম কারণও স্তন ক্যান্সার। প্রতি ৬ মিনিটে একজন নারী এতে আক্রান্ত হয় এবং প্রতি ১১ মিনিটে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন নারী মারা যায়।
স্তন ক্যান্সার কেন হয়?
মানবদেহ অসংখ্য জীব কোষ দ্বারা গঠিত। স্তনে থাকা কোষ অনিয়মিত বিভাজন এবং অতিরিক্ত কোষ বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয় এবং রক্তনালি, লসিকা ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। নারী-পুরুষ উভয়ই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে নারীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিই সবচেয়ে বেশি।
নামিবিয়ানদের বউ অদল-বদলের ঐতিহ্য
স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে অর্থাৎ মা-খালাদের থাকলে সন্তানদের হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় বলে গবেষণায় এসেছে। অবিবাহিতা বা সন্তানহীনা নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা আশঙ্কাজনক হিসেবে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। ৩০ বছরের পরে যারা প্রথম মা হয়েছেন তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্যদের তুলনায় তুলনামূলক বেশি। যাদের তুলনামূলক কম বয়সে মাসিক শুরু হয় ও দেরিতে মাসিক বন্ধ (মেনোপজ) হয় তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একাধারে অনেকদিন (১০ বছর বা বেশি) জন্ম নিরোধক বড়ি খেলেও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
স্তনের আকার-গঠনের ভিন্নতায় ক্যান্সারের লক্ষণ?
স্তন ক্যান্সার সাধারণত দুভাবে শনাক্ত করা যায়: ১. স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ২. রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে।
স্ক্রিনিং আবার দুভাবে করা যায়: ১. নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করা। ২. ডাক্তার বা নার্সের সাহায্যে পরীক্ষা করা।
মেয়েদের জন্য বিশ্বের প্রথম কনডম আবিষ্কার
রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও প্রধানত দুটি পদ্ধতি রয়েছে: ১. মেমোগ্রাম বা স্তনের বিশেষ ধরনের এক্স রে। ২. স্তনের আলট্রাসনোগ্রাম। এর বাইরে এমআরআই এবং বায়োপসি'র মাধমেও স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
নিজেই যেভাবে বুঝতে নিতে পারেন-
ধাপ-১
আয়নার সামনে দাঁড়ান। হাত দু'পাশে রেখে সোজা হয়ে লক্ষ্য করুন নিজেকে। তারপর হাত দুটি সোজা করে মাথার উপর তুলতে হবে। এবার সতর্কভাবে লক্ষ্য করে দেখতে হবে যে, স্তনবৃন্ত বা অন্য কোনো অংশ ফুলে আছে কি না অথবা কোনো অংশে লালচে ভাব বা টোল পড়া অংশ আছে কি না।
এবার কোমরে হাত দিয়ে কোমরে চাপ দিতে হবে। এখন ডান ও বাম স্তন দুটোই ভালোভাবে দেখতে হবে। কোনোরকম অস্বাভাবিক পরিবর্তন চোখে পড়ে কি না।
ধাপ- ২
মাটিতে অথবা বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। এরপর ডান স্তন পরীক্ষার জন্য ডান দিকে ঘাড়ের নিচে একটি বালিশ বা ভাঁজ করা কাপড় দিয়ে উঁচু করতে হবে এবং ডান হাত মাথার পেছনে রাখতে হবে। এবার বাম হাতের আঙুলগুলো চ্যাপ্টা করে ডান স্তনের উপর রাখতে হবে।
ঘড়ির কাঁটা ঘোরার দিকে চক্রাকারে হাত ঘোরানো শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে বলে রাখা জরুরি, স্তনের নিচের অংশ কিছুটা শক্ত মনে হতে পারে। এটা স্বাভাবিক বিষয়। এভাবে চক্রাকারে হাত ঘুরে আসার পর স্তনবৃন্তের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এক ইঞ্চি অগ্রসর হবার পর একইভাবে চক্রাকারে আবার স্তন পরীক্ষা করতে হবে।
সবশেষে স্তনবৃন্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনীর মধ্যে ধরে চাপ দিতে হবে এবং দেখতে হবে কোনো কিছু নিঃসরিত হয় কি না।
ধাপ - ৩
গোসলের সময় ভেজা চামড়ার উপর আঙুল চ্যাপ্টা করে ধীরে ধীরে চালনা করতে হবে। বাঁ দিকের স্তনের জন্য ডান হাত ও ডান দিকের স্তনের জন্য বাঁ হাত ব্যবহার করতে হবে। দেখতে হবে কোনো চাকা, গুটি বা শক্ত দলার মতো কিছু অনুভূত হয় কি না।
এই পরীক্ষাগুলো করবার সময় যদি স্তনে কোনো ধরনের শক্ত চাকা, গোটা বা দলা অনুভূত হয় অথবা স্তনের বোঁটা হতে কিছু নিঃসরিত হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
এভাবে মাসে অন্তত দুবার ঋতুচক্রের নির্দিষ্ট সময়ে প্রত্যেক নারীর স্তন পরীক্ষা করা উচিত।
স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ কী কী?
> স্তনের ভেতরে পিণ্ড অথবা স্তন পুরু হয়ে যাওয়া
> স্তনের বোঁটা থেকে রক্ত নিঃসরিত হওয়া
> স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন হওয়া
> স্তনের উপরের ত্বকের পরিবর্তন হওয়া (যেমন: গর্ত হয়ে যাওয়া)
> স্তনের বোঁটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া
> স্তনের বোঁটার চামড়া কুচকে যায় অথবা চামড়া ওঠে যাওয়া
> স্তনের চামড়া লাল হয়ে যাওয়া
> স্তনের বোঁটা দিয়ে অস্বাভাবিক রস বের হলে
স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা আছে?
স্তন ক্যান্সারের অনেক ধরণের চিকিৎসাই রয়েছে। রোগের গতিপ্রকৃতি বুঝে চিকিৎসকেরা একাধিক চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ধারণ করে থাকেন।
প্রাথমিক স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে সার্জারি হচ্ছে চিকিৎসার প্রথম ধাপ। টিউমারটির আকৃতির ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসক সার্জারির মাধ্যমে টিউমার ও তার আশপাশের কিছু সুস্থ টিস্যু অপসারণ করেন।
অপারেশন ছাড়াই ছেলে থেকে মেয়েতে রূপান্তর সম্ভব?
রেডিওথেরাপি উচ্চশক্তির এক্স-রে ব্যবহার করে ক্যানসার–আক্রান্ত কোষগুলোকে ধ্বংস করে। প্রায় ক্ষেত্রেই অপারেশনের পর ক্ষত শুকিয়ে গেলে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। এটি ক্যানসার পুনরায় ফিরে আসার ঝুঁকি কমায়।
কেমোথেরাপিতে ক্যানসারের কোষগুলোকে ধ্বংস করার জন্য ক্যানসারবিরোধী (সাইটোটক্সিক) ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
কেমোথেরাপি এবং হরমোনাল থেরাপি ছাড়াও নতুন আরও কার্যকর চিকিৎসা হলো টার্গেটেড থেরাপি, যা স্বাভাবিক কোষগুলোর ক্ষতি না করে নির্দিষ্ট কোষ ধ্বংস করতে পারে। এ ছাড়া ক্যানসারের বৃদ্ধি বা দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে পারে।
কখনো কখনো টার্গেটেড থেরাপি সেই সব জায়গায় কাজ করে, যেখানে কেমোথেরাপি কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। টার্গেটেড থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমোথেরাপির তুলনায় সীমিত।
সচেতনতা কতটা জরুরি?
আমাদের সমাজে স্তন ক্যান্সার নিয়ে রয়েছে পর্যাপ্ত সচেতনতার অভাব। নারীরা প্রকাশ্যে স্তন বিষয়ক আলোচনায় আগ্রহী হন না। ফলে স্তনের অস্বাভাবিকতা নিয়ে নিজেরা চিন্তিত থাকলেও সেটির চিকিৎসায় অনীহা দেখা যায়। আর এই সচেতনতার অভাবে অনেকের একেবারে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ধরা পড়ছে এটি। তখন মৃত্যুর প্রহর গুনা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। অথচ ঘরে বসেই সহজে একজন নারী তার স্তন পরীক্ষা করে নিতে পারেন। এতে স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়েই নির্ণয় করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব হলে ক্যান্সারের সাথে লড়াইয়ে জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
ঢাকার বিআরবি হাসপাতালের ব্রেস্ট ইউনিটের কনসালটেন্ট ডা. আলী নাফিসা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে শতকজরা ৩০ ভাগ স্তন ক্যান্সারে মৃত্যু প্রতিরোধ করেছে দেশটি। আমাদের দেশে ৩৫ বছরের পর থেকে নিয়মিত স্তন পরীক্ষার এবং মোমগ্র্যাফির মাধ্যমে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়িতে কাজ করতে হবে। কারণ প্রাথমিক বা দ্রুত শনাক্ত হলে শতকরা ৯৫ ভাগ স্তন ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব।
আরো পড়তে পারেন -
~ স্বপ্নে কী এমন ভয়ংকর ঘটনা দেখেছিলেন রাসূল (সাঃ)?
tags: স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা,tma,tmabd,ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা,ব্রেস্ট ফুলে যাওয়া,ব্রেস্ট টিউমারের কারণ,স্তন ক্যান্সার কেন হয়,স্তন টিপলে,