নামিবিয়ানদের বউ অদল-বদলের ঐতিহ্য | Wife swapping | TmA
বিয়েকে একটি পারিবারিক বন্ধন হিসেবে দেখা হয় দেশে দেশে। বিয়ের মাধ্যমে নারী ও পুরুষ শুধু একটি নতুন সংসার জীবনই শুরু করেন না, দায়বদ্ধ হন একসাথে চলার প্রতিশ্রুতিতে। সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে একে অপরকে ছেড়ে যান না কেউ, জড়ান না অন্য সম্পর্কেও। কিন্তু দায়বদ্ধতার এই জায়গায় বড় প্রশ্ন হয়ে এসেছে বউ বা স্ত্রী বদলের রীতি। ঠিক বদলও নয়, নিজের স্ত্রীকে পরপুরুষের শয্যাসঙ্গী করার এই ঐতিহ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই চোখে পড়ে। এই তালিকায় পরিচিত এক জাতি নামিবিয়ানরা।
আফ্রিকানদের বেড়ে ওঠা
১.২ বিলিয়ন মানুষের আফ্রিকা মহাদেশে প্রায় দুই সহস্রাধিক ভাষা রয়েছে। আছে অসংখ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, যার একটা বড় অংশই লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে গেছে। আফ্রিকানদের বহু বছর ধরেই পিছিয়ে পড়া এক মহাদেশ হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। ভৌগোলিক অবস্থান, শিক্ষার অপ্রতুলতা কিংবা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন থাকা এই মহাদেশের মানুষদের আটকে রেখেছে এগিয়ে যাওয়া থেকে। তবু সময়ের সাথে বদলেছে অনেককিছুই। বদলেছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও। আফ্রিকানদের ঘরে ঘরেও পৌঁছে যাচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল মৌলিক অধিকার। উন্নতি আসছে সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যগত ধ্যান ধারণায়ও। পিছিয়ে পড়ার তকমা থেকে সরে আসছে তারা। কিন্তু এর মধ্যেও কিছু জাতি আছে যারা সময়ের সাথে বদলায় নি তাদের চিরায়ত ঐতিহ্য। আধুনিক ধ্যান ধারণার সাথে বেশ অমিলই বলা চলে এসব জাতির। ওভাহিম্বা এবং ওভাজেম্বা এমনই দুইটি উপজাতি। এরা ‘ওকুজেপিসা ওমুকাজেন্দু’ নামে পুরনো এক ঐতিহ্যকে আজও লালন করে চলেছে। এই ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে তারা স্ত্রী অদল বদল করে থাকে সাময়িক সময়ের জন্য। এই উপজাতির বসবাস দক্ষিণ নামিবিয়ার কুনেনে ও পুমোসাতি অঞ্চলে। ওভাজেম্বাদের বসবাস আগে থেকেই থাকলেও ওভাহিম্বারা ১৬শ শতাব্দীতে অ্যাঙ্গোলা থেকে এসে ওভাজেম্বাদের সাথে বসতি গড়েন। এই দুই উপজাতিতে জনসংখ্যা ছাড়িয়েছে লক্ষাধিক। দুই উপজাতিতেই পুরুষদের পরিবারের কর্তা হিসেবে দেখা যায়। যদিও পরিবারের নারীরাই সাংসারিক সকল কাজ করেন। তবে নারী ও শিশুদের বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেন পুরুষরাই।
ওকুজেপিসা ওমুকাজেন্দু রীতিতে কী আছে?
ওকুজেপিসা ওমুকাজেন্দু রীতি অনুযায়ী, পরিবারের পুরুষেরা বাইরের পুরুষদের নিজ ঘরে নিয়ে আসেন। নিজের স্ত্রীকে তিনি অনুরোধ করেন অতিথি পুরুষটির সাথে রাত কাটাতে এবং যৌন মিলনে জড়াতে। যদি অতিথি পুরুষটি তার স্ত্রীকেও সঙ্গে নিয়ে আসেন তাহলে তার স্ত্রীও একইভাবে আতিথ্য দেওয়া পুরুষের সাথে রাত কাটাতে পারেন। পরপুরুষ যখন নিজের স্ত্রীর সাথে যৌনমিলনে লিপ্ত হন, তখন তার স্বামী অর্থাৎ পরিবারের কর্তার সেই বাড়িতে থাকার নিয়ম নেই এই রীতি। সেই রাতের জন্য তাকে ঘরের বাইরেই কাটাতে হয়।
সামাজিক মূল্যবোধে আঘাত হানছে এই রীতি?
ওকুজেপিসা ওমুকাজেন্দু রীতি পালন করাকে সে দেশে বন্ধুত্ব ও অবিশ্বাস দমনের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। নারীদের নিজস্ব কোনো মতামতের গুরুত্ব নেই। স্বামীর সিদ্ধান্তের কাছেই তাকে নতি স্বীকার করে পরপুরুষের সাথে রাত কাটাতে হয়। এক্ষেত্রে নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রাধান্য নেই এই রীতিতে।সাধারণত নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়াকে দেশে দেশে ধর্ষণ হিসেবে অভিহিত করা হলেও নামিবিয়ান এই দুই উপজাতিতে এটিকে নিত্যদিনের সাধারণ ঘটনা বানিয়ে ফেলা হয়েছে। নারীরা উল্টো চেষ্টা করেন তার শয্যাসঙ্গীকে সন্তুষ্ট করতে। তারা মনে করেন এতে করে স্বামীর সম্মান বাড়বে।
আরো পড়ুন : হস্তমৈথুনে কি উপকার আছে?
শত বছর ধরেই এই দুই উপজাতি এমন বিশ্বাসেই জীবন অতিবাহিত করছে। এই ঐতিহ্যের সাথে বাস করতে গিয়ে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি, সংক্রমণ বাড়ছে এইচআইভিরও। এই দুই উপজাতিতে এইডস সংক্রমণের হার ছাড়িয়েছে ১৮.২ শতাংশ।
নামিবিয়া ছাড়িয়ে দেশে দেশে বউ বদল
বউ বা স্ত্রী বদলের রীতি যে শুধু নামিবিয়ার দুই উপজাতির মধ্যেই দেখা যায় তা বললে ভুল হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এই রীতির দেখা মেলে। তার মধ্যে কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো-
উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব সাইবেরিয়ার বরফ আচ্ছাদিত অঞ্চলে বসবাস করে এস্কিমো উপজাতি। এই উপজাতি সম্প্রদায় তাদের ঘরগুলোর জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সদস্যরাও নামিবিয়ানদের মতো স্ত্রী বদলের মাধ্যমে অন্য পুরুষের স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন। আবার তার স্ত্রীও একইভাবে অন্য পুরুষের সঙ্গে অবাধে যৌনমিলন করতে পারেন। এমনকি এক পুরুষ এস্কিমোর বন্ধু বা ভাইয়েরা তার স্ত্রীর সঙ্গে রাত্রিযাপন করতে পারেন। এছাড়াও যখন কোনো নারীর স্বামী শহরের বাইরে বা শিকারে দূরে যান তখন তিনি চাইলেই স্বামীর ভাইয়ের সঙ্গে যৌনমিলন করতে পারেন। এমনকি অন্য পুরুষের সন্তান গর্ভে ধারণ করাও বৈধ এস্কিমো সমাজে।
উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়া, নাইজার, চাঁদ, ক্যামেরুনে ওডাবি গোত্রের দেখা মেলে। ওডাবি গোত্রের নারীরা যত খুশি যৌন সঙ্গীর সঙ্গে মেলামেশা করতে পারেন। এমনকি যে কারো সঙ্গে ও যে কোনো সময় যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন তারা। অবাধ মেলামেশার সংস্কৃতি পালন করে ওডাবি গোত্র। এই গোষ্ঠির পুরুষরা গ্যারাওল নামক একটি সঙ্গীত ও নৃত্যের উৎসব পালন করে। সেখানে নৃত্যরত পুরুষরা তাদের পছন্দের নারীকে নিয়ে পালাতে পারেন। তাদের ভাষায় একে বলা হয় বউ চুরি উৎসব। সপ্তাহ খানেক ধরে চলমান এই উৎসবে পুরুষদের মধ্যে চলে যৌন দক্ষতার লড়াই। যদিও এই গোত্রের মধ্যে বহুবিবাহ ও স্ত্রী চুরি বৈধ।
হিমালয়ের আর্যদের কথা বলতে চাই এবার। এরা উত্তর ভারতে সিন্ধু নদীর তীরে বসবাস করেন। হিমালয়ে বসবাসকারী এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিরা দ্রোকপা নামেও পরিচিত। স্ত্রী বদল করার সংস্কৃতি এই সম্প্রদায়ের পুরুষদের পুরনো এক ঐতিহ্য। এরা জনসংখ্যায় ৩ হাজার জন। এই উপজাতিদের সংস্কৃতি বেশ ভিন্ন। তারা সাধারণ সমাজের কোনো নিয়মই অনুসরণ করে না। তারা একে অপরের প্রতি খুবই বন্ধুসুলভ ও স্নেহশীল। স্ত্রী অদলবদলের রীতি তাদের কাছে বেশ সাধারণ। নামিবিয়ানদের মতো বউ অদল বদলের রীতি দেখা যায় আর্যদের মধ্যেও।
আফ্রিকার দেশ মালাউইতে বাস করে চেওয়া গোত্র। এই গোত্র উদ্ভট সব রীতি পালন করে থাকে। বউ অদল বদলের রীতিও আছে এদের সংস্কৃতিতে। প্রতি সপ্তাহেই এক বন্ধুর স্ত্রীকে অন্য বন্ধু নিয়ে যায় শয্যাসঙ্গী করতে। এরপর তারা রাত কাটায়। এই গোত্রের ধারণা, এই রীতি অনুশীলনের ফলে তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও উন্নত হয়। এমনকি যখন একজন নারী গর্ভবতী থাকেন, তখন সে তার স্বামীকে অনুমতি দেন অন্য নারীর সঙ্গে যৌনমিলন করার। যতদিন না তিনি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন ও শিশুর বয়স তিন মাস না হচ্ছে ততদিন তিনি স্বামীকে অন্য নারীর সঙ্গে ভাগ করেন।একইভাবে যদি কোনো দম্পতির সন্তান না হয়, তাহলে সেই পুরুষ তার স্ত্রীকে গর্ভবতী করার জন্য অন্য একজন পুরুষকে নিয়োগ করতে পারে। যদিও তা ঘটে অর্থের বিনিময়ে। এ কারণে অনেক পুরুষরাই অর্থের বিনিময়ে এ কাজ করেন।
বাংলাদেশেও কালেভদ্রে দেখা মেলে এমন বউ বদল রীতির। ২০১৫ সালে এমন এক ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। চুয়াডাঙ্গায় চা দোকানি আনারের (২৫) সাথে রাজমিস্ত্রি আবু জাফরের (২৫) খুব ভালো বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বে সুবাদে ছিলো দু’জন দু’জনের বাড়িতে অবাধ যাতায়াত। এ সুযোগে দুই বন্ধু পরস্পরের স্ত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সিদ্ধান্ত হয় দুই বন্ধু তাদের বউ বদল করবে।সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০১৪ সালে আবু জাফর তার স্ত্রী লাইলী খাতুনকে (১৯) আনারের সাথে এবং আনার তার স্ত্রী ১ সন্তানের জননী রোজিনা খাতুনকে (২০) আবু জাফরের সাথে বিয়ে দেয়। গত ১ বছর তারা সুখে শান্তিতে ঘর সংসার করে আসছিলো। এ অবস্থায় তারা আবার বউ বদলের সিদ্ধান্ত নেয়।
tags: বউ অদল বদল, স্ত্রী বদল, নামিবিয়ায় বউ বদল, যৌনমিলন, tma,tmabd,বাংলাদেশে বউ বদল,অদ্ভূত রীতি,