Written by : Tanvir Mahatab Abir
২০১৫ সালের কথা। সবেমাত্র এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলো। সবাই ছুটছে একটা সিটের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য অর্জনে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সিট সবসময়ের মতো তখনও সোনার হরিণ। ঢাকা মুখী জনস্রোতে আমিও গা ভাসালাম। ভর্তি হলাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির কোচিংয়ে। উঠলাম হোস্টেলে। কিন্তু মন টিকলো না। ক'টা দিন ক্লাস করেই ফিরে আসলাম বাড়িতে। বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা শুরু করলাম। নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের প্রতি ভালোলাগা বা আগ্রহ ছিল না আমার। একটা সিটের আশাতেই ছিলাম। এইচএসসির রেজাল্ট বেরুলো। রেজাল্ট দেখে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া হয় নি। শুধু বুঝে গিয়েছিলাম, ইন্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আবেদন করতে পারবো না। প্রথম ধাক্কা ছিল এটা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর, বুটেক্স, ঢাবিভুক্ত ইন্জিনিয়ারিং ইউনিট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহজালাল, সিলেট ইন্জিনিয়ারিং কলেজ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল - কোনোটাই বাদ রাখি নি। আবেদন করেছি। পরীক্ষাও দিয়েছি। ফলাফল? শূন্য। ওয়েটিংয়েও আসে নি। বিশ্বাসের জায়গায় চিড় ধরলেও আশা ছাড়ি নি।
আমি জানতাম চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। হয়তো আজ হয় নি, চেষ্টা করতে থাকলে কাল নয়তো পরশু ফল আসবেই। সেই আশাতেই পরীক্ষা দিয়ে গিয়েছি। সে বছর কোথাও হলো না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানে ভর্তি হলাম। ঠিক করলাম, সেকেন্ড টাইম দিবো। না হলে রিএডমিশন নিয়ে পদার্থেই পড়বো।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি বিজ্ঞপ্তি
শুরু হলো আবার সে-ই একই বইগুলো দ্বিতীয়বারের মতো ঘাটাঘাটি৷ নিজের মতো করে প্ল্যান করে পড়েছি। অনার্সের ক্লাস করিনি একদিনও। সাথের অনেকেই সেকেন্ড টাইমের কোচিংয়ে ভর্তি হলো। আমি হলাম না। বাসায় থেকেই প্রিপারেশন নিতে থাকলাম।
আবার আসলো ভর্তি মৌসুম। ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিতে থাকলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ ছিল না ঢাবি, জগন্নাথে। এবার গণহারে আর এপ্লাই করবো না ঠিক করলাম। বেছে বেছে আবেদন করতে থাকলাম। যতদূর মনে পড়ে, সিলেট শাহজালাল (শাবিপ্রবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল - এগুলোতেই আবেদন করেছিলাম। পরীক্ষাও দিলাম। ফলাফল? সে-ই আগের মতোই। এতটুক পড়ে যদি মনে করেন খেলা শেষ তাহলে কিন্তু ভুল করলেন। খেলা তখনও বাকি!
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেবারও আবেদন করেছিলাম, রেজাল্ট মোটামুটি ভালো থাকায় প্রথম চয়েজে থাকা 'পরিসংখ্যান বা Statistics ' পেলাম। আর কোনো আশা না থাকায় ভর্তি হলাম, ক্লাসও শুরু করে দিলাম। এই বিষয়টা মোটামুটি সহজবোধ্যই ছিল। মিল ছিল এইচএসসির পড়াশোনার সাথে। টার্মগুলো আরো ভালোভাবে বুঝতে একটা প্রাইভেটেও যাওয়া শুরু করলাম। সম্ভবত ডিসেম্বর নাগাদ শুরু করেছিলাম ক্লাস। ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ক্লাস করেছি৷ মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। এটাকেই মেনে নিয়েছিলাম নিয়তি হিসেবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি : কোথায় কত কোটা?
কিন্তু ভাগ্যে লেখা ছিল অন্যকিছু!!!!
আমার এক ফ্রেন্ড ছিল যে একই কলেজে ভিন্ন আরেকটি বিষয়ে ভর্তি হয়েছিল। তার সাথে প্রায়ই ফেসবুকে কথা হতো। ২৪ ফেব্রুয়ারি সে জানায়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) শূণ্য আসনে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তার নাম আছে সিরিয়ালে। আমাকেও বললো চেক করে দেখতে। দেখলাম। রোলও খুঁজে পেলাম। কিন্তু যে ইউনিটে এসেছে আমাদের দুইজনের, সেখানে আসন খালি আছে মাত্র ৩০ টি৷ আশা করবো না কি করবো না দ্বিধাদ্বন্দে রইলাম। পরের মাসে ৬ তারিখ ভাইবার জন্য ডাকা হলো। সিরিয়াল আসলে সেদিনই ভর্তি করাবে।
সকল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি (২০২১-২২) সর্বশেষ আপডেট
দ্বিধা নিয়েই গেলাম ৬ই মার্চ। আমার বন্ধুর চান্স মিললো, কারণ ওর সিরিয়াল আমার অনেক আগে ছিল। এবার আমার অপেক্ষা। একটি একটি করে সিট কমছে, আশাগুলো নিরাশায় রূপ নিচ্ছে। ভাগ্যের কি লীলাখেলা! শেষ একটি সিট যখন বাকি, তখনই আমার ডাক পড়লো। ভর্তি হয়ে গেলাম। আলহামদুলিল্লাহ। সে বছর আমিই ছিলাম নোবিপ্রবিতে ভর্তি হওয়া সর্বশেষ শিক্ষার্থী।
এই লেখাটার একটাই উদ্দেশ্য, নিরাশ হবেন না। নিজ নিজ স্রষ্টার উপর ভরসা রাখুন। চোখ রাখুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির আপডেটগুলোয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূল ভর্তি কার্যক্রম শেষ হওয়ার ৩/৪ মাস পরও শূন্য আসনে ভর্তি নেয়। এজন্য নিয়মিত আপডেট রাখার কোনো বিকল্প নেই।
ভেঙ্গে পড়বেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সময়টা সকল পরীক্ষার্থীই মানসিকভাবে চাপে থাকেন। একটা সিট অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে সেটা কখনোই জীবনের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। বিশ্বাস রাখুন নিজের প্রতি। কে কী বললো, সেই ভাবনায় নিজেকে ডুবাবেন না। নিজের চেষ্টায় লেগে থাকুন। ডাকুন নিজ স্রষ্টাকে, বলুন তাকে। আপনি আপনার চেষ্টায় বাঁচলে, তিনি অবশ্যই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। এক বিশ্ববিদ্যালয়ে না হলে, সামনে থাকা অন্য সুযোগ কাজে লাগান। জীবন কখনোই থেমে থাকে না। আপনি একটি সিট না পেলে আপনার জীবন যে থেমে যাবে, এমন নয়। হয়তো গতি বদলাবে, কিন্তু থামিয়ে দেওয়ার চিন্তা করবেন না কখনো। সেই সিদ্ধান্ত একমাত্র আপনার স্রষ্টার। সকলের জন্য নিরন্তর শুভকামনা।
লেখক: শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
'আপনার ভাবনা' বিভাগে লিখতে পারেন আপনিও। সর্বনিম্ন ৩৫০ শব্দের মধ্যে লেখা পাঠান আমাদের কাছে। সম্পাদক রিভিউ সাপেক্ষে প্রকাশত হবে TmA তে। লেখা পাঠানোর মেইল - tmabd2021@gmail.com। Subject এ 'আপনার ভাবনা' লিখতে ভুলবেন না।
tags: tma,tmabd,বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি,ভর্তি আপডেট,হতাশা থেকে রেহাই,নোবিপ্রবি ভর্তি,জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি,গুচ্ছ ভর্তি,
পড়তে পারেন:
১। যেভাবে হবে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া
৩। স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে কতটা জানেন?