ফেসবুক থেকে মেটা : কী আছে জাকারবার্গের ভাবনায়? | Meta | TmA

 


Written by : Tanvir Mahatab Abir


গেল কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল ফেসবুকের নাম পরিবর্তনের। অবশেষে গুঞ্জনই হলো সত্যি। নিজেদের ব্রান্ডিং বদলে ফেলার অংশ হিসেবে ফেসবুক তাদের কোম্পানীর নাম বদলেছে। নতুন নাম ঠিক করা হয়েছে 'মেটা'।  


২৮ অক্টোবর ফেসবুকের বার্ষিক ডেভেলপার সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান ফেসবুক সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। 


ফেসবুকের পথচলা 


ইন্টারনেট দুনিয়ায় জায়ান্ট হয়ে ওঠা 'ফেসবুক' এর শুরুর দিনগুলোয় এর স্বপ্নদ্রষ্টা মার্ক জাকারবার্গও সম্ভবত ভাবেন নি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি সাফল্য ঈর্ষণীয় হয়ে উঠবে সময়ের সাথে। ২০০৪ সালে জাকারবার্গ যখন হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন, তখনই তার ভাবনায় আসে তার সহপাঠী এবং হার্ভাডের তৎকালীন শিক্ষার্থীদের জন্য যোগাযোগের একটি মাধ্যম তৈরির। সেই ভাবনায় সফল পরিণতির নাম ফেসবুক। আমরা সবসময়ই মার্ক জাকারবার্গকে চিনি সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। কারণ, ফেসবুক সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আছেন আরও তিনজন। এডুয়ার্ডো স্যাভেরেইন, ডাস্টিন মসকভিজ এবং ক্রিস হিউজেস। যাত্রা শুরুর ১১ মাসেই ১০ লক্ষ ব্যবহারকারী পেয়ে যায় ফেসবুক। পরের এক বছরে ৬০ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে যায় এই মাধ্যম। ২০০৬ সালের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো ফেসবুকের মোবাইল সংস্করণ বের হয়। ব্যবহারকারী বাড়তে থাকায় সেবার মান ও নিত্য নতুন ফিচারে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে থাকে ফেসবুক। ২০১২ সালে আরেক সামাজিক মাধ্যম ইন্সটাগ্রাম কিনে নেয় ফেসবুক। 

পরের বছরগুলোয় অ্যাটলাস, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ওকুলাসও কিনে নেয় ফেসবুক। নিজেদের সমৃদ্ধির ধারায় এবার প্যারেন্ট কোম্পানি খুলতে যাচ্ছে ফেসবুক, নাম দেয়া হয়েছে মেটা৷ 


ফেসবুক থেকে মেটা 


সাম্প্রতিক সময়ে জাকারবার্গ ও ফেসবুক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন ফেসবুকের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে। সূত্র বলছে, নিজেদের ব্রান্ডিংকে আরও সম্প্রসারিত করতে এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা অগমেন্টেড রিয়্যালিটিভিত্তিক দুনিয়ায় নিজেদের অবস্থান জানান দিতে নাম পরিবর্তন জরুরি ছিল। সেই সিদ্ধান্তই আসলো ২৮ অক্টোবর সামাজিক মাধ্যমটির বার্ষিক ডেভেলপার সম্মেলনে। রাখা হলো নতুন নাম 'মেটা'। "মেটা" শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ থেকে, যার অর্থ "গণ্ডির বাইরে"। 


ফেসবুক প্রোটেক্ট চালু না করলে বন্ধ হবে একাউন্ট?
 


জাকারবার্গের ভাবনায় রয়েছে "মেটাভার্স" নামে একটি অনলাইন দুনিয়া তৈরির পরিকল্পনা উন্মোচন করা৷ সেখানে মানুষ ভার্চুয়াল পরিবেশে ভিআর (ভার্চুয়াল রিয়েলিটি) হেডসেট ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ করার পাশাপাশি, গেম খেলা এবং যোগাযোগ করতে পারবে।


জাকারবার্গ বলছেন, "আমরা যা কিছু করছি এবং ভবিষ্যতে করবো, সেটা বিদ্যমান ব্র্যান্ডটি সম্ভবত উপস্থাপন করতে পারছে না, তাই পরিবর্তন দরকার।"




"আমি আশা করি যে সময়ের সাথে সাথে আমাদের মেটাভার্স কোম্পানি হিসাবে দেখা হবে। আর আমরা সামনে যা তৈরি করতে যাচ্ছি, সেটার ওপর ভিত্তি করেই আমাদের কাজ ও পরিচয় গড়ে উঠবে।" এক ভার্চুয়াল কনফারেন্সে তিনি এ কথা বলেন। 

নামিবিয়ানরা বউ অদল বদল করেন কেন?


ফেসবুক এখন তাদের বিদ্যমান এবং সামনের দিনগুলোয় আসা ব্যবসাকে দুটি ভিন্ন অংশ হিসেবে দেখতে চাইছে। একটি অংশ তাদের অ্যাপস পরিবারের জন্য এবং আরেকটি অংশ ভবিষ্যতের প্ল্যাটফর্মে কাজের জন্য৷


জাকারবার্গ বলছেন, "এখন থেকে আমরা আর ফেসবুক-ফার্স্ট নই, আমরা হবো মেটাভার্স-ফার্স্ট। এর অর্থ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের আর আমাদের অন্যান্য পরিষেবা গ্রহণ করতে হলে আগে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকার প্রয়োজন হবে না। যেহেতু আমাদের সকল পণ্যে আমাদের নতুন ব্র্যান্ডটি দেখা দিতে শুরু করেছে, আমি আশা করছি বিশ্বব্যাপী মানুষ খুব শীঘ্রই জেনে যাবে মেটা ব্র্যান্ড কী, আর ভবিষ্যতেই বা কী অপেক্ষা করছে। "


ফেসবুক নামটি কি হারিয়ে যাবে? 


এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে একটি উদাহরণ সামনে আনতে চাই। ২০১৫ সাল পর্যন্ত জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান ছিল গুগল ইনকরপোরেটেড। মানে গুগলের সব প্রোডাক্টই পরিচালিত হয় গুগলের নামেই। এককথায় প্রোডাক্ট হিসেবে গুগল যেমন ছিল, তেমনি প্যারেন্ট কোম্পানি হিসেবেও ছিল গুগলেরই নাম। সে বছরের আগস্টে অ্যালফাবেট ইনকরপোরেটেড (আইএনসি) নামে নতুন প্রতিষ্ঠানের ঘোষণা দেয় গুগল কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে নতুন এ প্রতিষ্ঠানটির অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে গুগল এবং এর সহযোগী ব্র্যান্ড, পণ্য ও সেবাগুলো। সে সময় গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ বলেছিলেন, " মূলত গুগলকে আরও উঁচু জায়গায় নিয়ে যেতে বড় একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে চিন্তা থেকেই অ্যালফাবেটের যাত্রা।" গুগলও অ্যালফাবেটের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে তখন থেকে। 


একই ঘটনা ঘটেছে ফেসবুকের ক্ষেত্রেও। এতদিন ফেসবুকই নিয়ন্ত্রণ করছিল জাকারবার্গের সহযোগী সকল সেবা। কিন্তু মেটা নামে নতুন প্রতিষ্ঠান এখন থেকে মূল প্যারেন্ট কোম্পানি হিসেবে কাজ করবে। এর ফলে ফেসবুক নিজেও যেমন মেটা'র অধীনে থাকবে তেমনি হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামের মতো তাদের সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও মেটা'র নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। মূলত মেটা ও ফেসবুকের কাজের ধরণ ভিন্ন হবে বলেই প্যারেন্ট কোম্পানি চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন জাকারবার্গ। এই ভাবনা অবশ্য ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপ কেনার পরই তার মাথায় এসেছিল। তবে উদ্যোগ বাস্তবায়নের এখনই সেরা সময় ছিল বলে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি। এর ফলে ফেসবুকসহ সহযোগী কোনো সেবারই নাম পরিবর্তন হচ্ছে না। শুধু প্রতিষ্ঠানগুলো একটি মূল প্যারেন্ট কোম্পানির অধীনে চলে যাচ্ছে৷ 



মেটার কাজের পরিধি


মেটার মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক দুনিয়ায় নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চায় জাকারবার্গের কোম্পানি৷ এর অংশ হিসেবে বেশ কিছু সেগমেন্টের ধারণা দেওয়া হয়েছে ফেসবুকের একটি পোস্টে। এই সেগমেন্টগুলো

(বিশেষত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও অগমেন্টেড রিয়েলিটি) ব্যবহারে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নে মেটা কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগ করবে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার। 


১। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি : ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এমন একটি ধারণা যার সাহায্য দূরের কারো সাথে আপনি যখন যোগাযোগ করবেন সেটিকে পুরোপুরি আপনার সামনেই ঘটছে বলে মনে হবে। এর জন্য প্রয়োজন হবে কাস্ট-টু নামের একটি ভিআর হেডসেট।




২। অগমেন্টেড রিয়েলিটি : এই সেবা ভার্চুয়াল এক্সপেরিয়েন্সকে প্লেফুল অর্থাৎ জীবন্ত করে তুলবে। ইমেজ এবং ভিডিওর সাহায্য নিয়ে স্ক্রিন সুইপের মাধ্যমে ভার্চুয়াল এক্সপেরিয়েন্সকে করবে আরও আনন্দময়। এক্ষেত্রে ব্যবহার হবে স্পার্ক অগমেন্টেড রিয়েলিটি ডিভাইস। 


। স্মার্ট চশমা : মেটাভার্স দুনিয়ায় নিজেকে জানান দেওয়ার প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করবে স্মার্ট চশমা। এখানে সুবিধা থাকবে এক ক্লিকে অডিও ও ভিডিও রেকর্ড করার। মেটায় এই সুবিধা পেতে ব্যবহার হবে রে-বেন গ্লাস। 


মেটা দৃশ্যমান হবে কবে?



কোম্পানিটি মেটা নাম ঘোষণা দিন অর্থাৎ ২৮ অক্টোবর ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কে তাদের সদর দফতরে একটি নতুন সাইনবোর্ড উন্মোচন করে, তার থাম্বস-আপ "লাইক" লোগোটিকে সরিয়ে 'মেটা'র একটি নীল অসীম আকৃতির লোগো বসিয়েছে।




ধারণা করা হচ্ছে, মেটাভার্স দেখতে ভিআর-এর একটি সংস্করণের মতো হতে পারে, কিন্তু কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে এটি ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ হতে পারে।


সেখানে মানুষ কম্পিউটারে কাজ করার পরিবর্তে, মেটাভার্স নামের ভার্চুয়াল জগতে হেডসেটের সাহায্যের প্রবেশ করতে পারবে। যেখানে সব ধরণের ডিজিটাল পরিবেশের সাথে সংযোগ স্থাপন করা যাবে৷


আশা করা হচ্ছে যে, ভার্চুয়াল জগতটি কাজ, খেলা এবং কনসার্ট থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগের জন্যও ব্যবহার করা যাবে। 


এরই মধ্যে ফেসবুকের নিজস্ব পেইজগুলো নাম বদলে মেটা রাখা হয়েছে। সামনের দিনগুলোয় দৃশ্যমান হবে মেটার কার্যক্রমও। 


ফেসবুক বলছে, তারা পহেলা ডিসেম্বর থেকে নতুন স্টক টিকার এমভিআরএস-এর অধীনে তাদের শেয়ার লেনদেন শুরু করতে চায়। 





আরো পড়তে পারেন - 

আইনস্টাইনকে ঘিরে রহস্য! 

স্বপ্নে কী এমন ভয়ংকর ঘটনা দেখেছিলেন রাসূল (সাঃ)?