গেল কয়েকদিনে সামাজিক মাধ্যমে একটি লেখা রীতিমত ভাইরাল হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা লেখাটি নিজ নিজ ভাষায় কপি করে পোস্ট করছেন।
পোস্টে লেখা রয়েছে,
"আগামীকাল থেকে নতুন ফেসবুক/মেটা নিয়ম শুরু হবে যেখানে তারা আপনার ছবি ব্যবহার করতে পারবে। ভুলে যাবেন না, আজ শেষ দিন! তাই একটা কাজ করে রাখুন। এটি আপনার বিরুদ্ধে মামলায় ব্যবহার করা যেতে পারে; আপনি যা কিছু পোস্ট করেছেন - এমনকি মেসেজ যা মুছে ফেলা হয়েছে। এতে কোন খরচ নেই, শুধু কপি করে পোস্ট করুন, পরে আফসোস করার চেয়ে ভালো হবে।
ইউসিসি আইনের অধীনে ১-২০৭, ১-৩০৮... আমি আমার অধিকার সংরক্ষণ আরোপ করছি...
আমি ফেসবুক/মেটা বা অন্য কোন ফেসবুক/মেটা সম্পর্কিত ব্যক্তিকে আমার ছবি, তথ্য, বার্তা বা বার্তা ব্যবহার করার অনুমতি দিচ্ছি না, অতীতে এবং ভবিষ্যতে কোন সময়েই।
আরও পড়ুন : ফেসবুক থেকে মেটা : কী আছে জাকারবার্গের ভাবনায়?
এই পোস্টেটি কপি করে আপনার নিজের পেজে পোস্ট করে রাখুন এবং ঘোষণা দিন যে, আপনি ফেসবুক/মেটা-কে তাদের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা আমার তথ্য অন্য কোথাও শেয়ার করার অনুমতি দিচ্ছি না। ছবি, বর্তমান বা অতীত, বন্ধু-বান্ধব, ফোন নম্বর, ইমেইল এড্রেস, ব্যক্তিগত কোন তথ্য বা পোস্ট এ সবের কোন কিছুই আমার লিখিত অনুমতি ছাড়া ভিন্নরূপে ব্যবহার করা যাবে না।"
সম্প্রতি ফেসবুক কোম্পানি তাদের গ্রুপের নাম বদলেছে, রেখেছে মেটা। মেটা'র অধীনে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ পরিচালিত হচ্ছে এখন।
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ছবি ফেসবুক তাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার এমন বিতর্ক এবারই প্রথম নয়। এর আগেও এমন বিতর্ক সামনে এসেছে। নাম বদলে ‘মেটা’ হতেই ব্যবহারকারীর ছবি-ব্যবহার নিয়ে পুরনো এই বিতর্ক ফিরে এল। না জানিয়েই যে কোনও উদ্দেশ্যে ব্যবহারকারীর ছবি ব্যবহার করতে পারবে ফেসবুকের মূল সংস্থা ‘মেটা’— এই অভিযোগ নিয়েই কার্যত তোলপাড় ফেসবুক।
ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করছেন, নাম বদল সম্পূর্ণ হতেই সামাজিক মাধ্যমটির নিয়মবিধিতে বেশ কিছু বদল আনা হয়েছে। যদিও সেই সব দাবি ভিত্তিহীন বলেই জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
ফেসবুকের বিরুদ্ধে ভাইরাল হওয়া পোস্টটিতে করা অভিযোগটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম নজরে এসেছিল এই রকম একটি পোস্ট। তখনও একাংশের দাবি ছিল, প্রয়োজনে ব্যবহারকারীর মুছে ফেলা ছবিও যাতে তৃতীয় ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া যায়, সে রকম নিয়ম চালু করতে চলেছে ফেসবুক। বর্তমানে যে পোস্টটি ফের ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে, তাতে সামান্য কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। ফেসবুকের বিরুদ্ধে অধিকার হননের অভিযোগ তুলে পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘ইউসিসি আইনের অধীনে ১-২০৭, ১-৩০৮... আমি আমার অধিকার সংরক্ষণ আরোপ করছি।’
অন্য ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে ওই পোস্টটি শেয়ার করার আবেদন জানিয়ে শেষে লেখা হয়, ‘আমি ফেসবুক/ মেটাকে তাদের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা, আমার তথ্য শেয়ার করার অনুমতি দিচ্ছি না। ছবি, বর্তমান বা অতীত, জনসংখ্যা, ফোন নম্বর বা পোস্ট... একদম আমার লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনও কিছু কোনও রূপে ব্যবহার করা যাবে না।’
এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ জানিয়ে মূল পোস্টটিকেও ‘গুজব’ বলে দাবি করছে বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ফেসবুকও পোস্টটিকে ‘ভুয়া খবর’ হিসেবেই চিহ্নিত করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল সংস্থার নামবদল হলেও ফেসবুক যে পরিষেবা দিয়ে থাকে, তাতে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। তা লেখাও রয়েছে ফেসবুকের ‘টার্মস অব সার্ভিস’-এর পাতায়।
আরও বলা রয়েছে, ব্যবহারকারী ফেসবুকে যে বিষয়বস্তু (কনটেন্ট) তুলে ধরেন, তার উপর ব্যবহারকারীর মেধাস্বত্বের অধিকার থাকে। কোনও নিয়মই সেই অধিকার কেড়ে নিতে পারে না। এই বক্তব্য তুলে ধরেই ফেসবুকের বিরুদ্ধে ছবি, পোস্টের যথেচ্ছ ব্যবহার সংক্রান্ত অভিযোগ খারিজ করছে বিশেষজ্ঞ মহল। যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘মেটা’-র পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি সামনে আসেনি এখনও।
এই লেখাগুলো মিস করবেন না যেন!