আর রাহীকুল মাখতূম: বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে মহানবীর জীবন | Ar Rahikul Makhtum | TmA

 


আর রাহীকুল মাখতূম: বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে মহানবীর জীবন | Ar Rahikul Makhtum | TmA


Written by : Tanvir Mahatab Abir


মহানবী (সা.)। এই মানুষটির পার্থিব জীবন নিয়েই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি জানার আগ্রহ সারাবিশ্বব্যাপী৷ মাত্র ৬৩ বছর বেঁচে ছিলেন পৃথিবীতে। ৬১০ খ্রিস্টাব্দে আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুওয়্যাত প্রাপ্তির পর বাকি জীবন সংগ্রামমুখর এক সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। এই সংগ্রাম আর লড়াই ছিল সত্য আর ন্যায়ের পক্ষে ইসলামকে সগৌরবে প্রতিষ্ঠা করার লড়াই।


রাসূল (সা:) এর আগমনের উদ্দেশ্য নিয়ে পবিত্র কুরআনের এক আয়াতে বলা হয়েছে,

‘তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি তাঁর রসূলকে হেদায়েত ও দ্বীনে হক সহকারে পাঠিয়েছেন, যাতে আর সব দ্বীনের ওপর এ দ্বীনের হককে বিজয়ী করে তোলেন, এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট।’


- সূরা আল ফাতাহ, আয়াত ২৮


এ আয়াত থেকেই স্পষ্ট, রাসূল (সা:)কে শুধুমাত্র একজন ধর্ম প্রচারক কিংবা ধর্মীয় নেতা করে দুনিয়ায় পাঠানো হয়নি, বরং ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান রূপে একটি বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল রাসূলের প্রধান দায়িত্ব।


সেই দায়িত্বে তিনি ছাড়িয়ে গিয়েছেন প্রত্যাশার সকল মাপকাঠি৷ ক্ষমা, উদারতা, ধৈর্য-সহিষ্ণুতা, সততা, সত্যবাদিতা, দয়া, দানে, কাজে কর্মে, আচার-আচরণে, মানবতা ও মহত্ত্বে দৃষ্টান্ত আর পথ প্রদর্শক হয়ে সর্বকালের সকল মানুষের জন্য উত্তম আদর্শ হওয়ার যোগ্যতা রেখেছেন৷


আরো পড়তে পারেন : আল আকসা মসজিদের ইতিকথা


৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পর ১৩৮৮ বছর পেরিয়ে গেছে। তবু তাঁর জীবন ব্যবস্থা, সংগ্রাম আর ইসলাম প্রতিষ্ঠার গল্প এখনও সমান আগ্রহে আলোচিত হয় সর্বমহলে৷ তবে সঠিক ইতিহাস সময়ের সাথে হারিয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত ইসলামের সর্বশেষ এই দূতের জীবন নিয়ে জানতে তাই বিশ্বাসযোগ্য সূত্র, পুস্তক বা গ্রন্থই একমাত্র ভরসা হয়ে আছে।


মূল কথায় আসি। আর্‌-রাহীকুল মাখতূম। আরবী, উর্দূ, ইংরেজি এবং বাংলা ভাষায় সফিউর রহমান মোবারকপুরী রচিত নবী মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনীগ্রন্থ। আধুনিক যুগে ইসলামের নবী মুহাম্মাদ সা: এর জীবনী নিয়ে আরবী ভাষায় লেখা অন্যতম সমাদৃত একটি সীরাত গ্রন্থ এটি।


প্রতিযোগিতা থেকে সেরা হওয়ার গল্প


১৯৭৬ সালের মার্চ। পাকিস্তানের করাচিতে প্রথম মুসলিম সীরাত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে মূল ভূমিকায় ছিলেন সৌদি আরবের মক্কার রাবেতায়ে আলেমগণ। সম্মেলনের সমাপ্তি অধিবেশনে নবীজি (সা.) এর জীবনী রচনা বিষয়ক প্রতিযোগিতার ঘোষণা দেয়া হয়। পুরষ্কারও ঘোষণা করা হয় প্রথম পাঁচজনের জন্য যথাক্রমে ৫০, ৪০, ৩০, ২০ এবং ১০ হাজার সৌদি রিয়াল করে। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন ভারতের আযমগড় জেলার ইসলামিক ইতিহাস লেখক সফিউর রহমান মোবারকপুরী।


১৯৪৩ সালে জন্ম নেয়া বিখ্যাত এই হাদিসবেত্তা পেশাজীবনে প্রায় ২৮ বছর ভারতের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। সর্বশেষ তিনি মদিনার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান ১৯৮৮ সালে। ২০০৬ সালে গুণী এই আলেম মৃত্যুবরণ করেন।





সেই প্রতিযোগিতায় ফিরি। ১৯৭৮ সালের জুলাইয়ে করাচিতে প্রথম এশীয় ইসলামী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই সিরাতুন্নবী প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। জমা পড়া ১১২৮ টি পান্ডুলিপি থেকে প্রতিযোগিতার জন্য ১৮৩টি পান্ডুলিপি মনোনীত করা নয়। তার মধ্যে থেকে প্রথম স্থান লাভ করে মাওলানা সফিউর রহমান মোবারকপুরীর পান্ডুলিপি।


কেনও বিশ্বস্ত এই গ্রন্থ?


এই প্রতিযোগিতায় মূল বিচারক ছিলেন সৌদির তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী শেখ হাসান ইবনে আব্দুল্লাহ আল শেখ। প্রতিযোগিতায় আরও আটজন বিচারক ছিলেন, এঁরা সকলেই জেদ্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীয়ত বিষয়ক শিক্ষক, সীরাতুন্নবী ও ইসলামী ইতিহাস বিশেষজ্ঞ।


এজন্য বিজয়ী পাঁচটি গ্রন্থের বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন উঠার কোনো অবকাশ ছিল না। কারণ বিচারক সকলেই ছিলেন সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ে অভিজ্ঞ ও জ্ঞানের অধিকারী। 


এ গ্রন্থটি মূলতঃ সীরাত এর ওপর রচিত অতীতের শত শত গ্রন্থের মৌলিক ও নির্ভরযোগ্য উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। এক কথায় সীরাত সংক্রান্ত বিশাল সংগ্রহশালার একটি সংকলন গ্রন্থ।


কী আছে গ্রন্থটিতে?


৫৫০ পৃষ্ঠার কলেবরের এই গ্রন্থে মহানবী (সা.) এর সমগ্র জীবন নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে৷ আলোচিত হয়েছে নবীজির জন্ম পূর্ব আরবের অবস্হা নিয়েও৷ মূল ছয়টি অধ্যায়ে ভাগ করে সেগুলোকে আবার ছোট ছোট অংশে ভাগ করে বিস্তারিত বর্ণনা দেয়ার চেষ্ঠা ছিল পুরো গ্রন্থজুড়েই। প্রতিটি পাতায় তথ্যসূত্র সংযোজন গ্রন্থটির তথ্যের বিভ্রান্তি দূর করার সফল প্রয়াস বলে বিবেচিত হয়েছে।


যে ছয়টি মূল অধ্যায়


১. আঁধার ঘেরা পৃথিবীঃ সোবহে সাদিকের অপেক্ষা।

২. কোন বংশে সেই সোনার মানুষঃ আল আমিন থেকে আর রাসূল। 

৩. নিজ ঘরে তিনি পরদেশীঃ যুলুম নিপীড়নের তেরো বছর।

৪. ইয়াসরেবের (মদিনার) দশ বছরঃ ফকিরের বেশে বাদশাহ।

৫. মহাবিজয়ের দ্বারপ্রান্তেঃ আজ কোনো প্রতিশোধ নয়।

৬. বিদায় হে বন্ধুঃ অন্তিম যাত্রার পথে মহানবী৷


গ্রন্থটি বাংলা ভাষায় আমার জানামতে পাঁচজন ভিন্ন লেখক অনুবাদ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে আল কোরআন একাডেমী লন্ডন পরিবেশিত খাদিজা আক্তার রেজায়ী’র অনূদিত গ্রন্থটি। এটি ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয়।



tags: আর রাহীকুল মাখতূম,শ্রেষ্ঠ সিরাত গ্রন্থ,Ar-Raheeq Al-Makhtum, tma, tmabd, আর রাহীকুল মাখতূম: আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ.),ar rahikul makhtum,ar rahikul makhtum bangla pdf, ar rahikul makhtum bangla pdf download,আর রাহীকুল মাখতুম তাওহীদ প্রকাশনী,